'মানব' এবং 'অধিকার' শব্দ দ্বয়ের সমস্টি হল "মানবাধিকার" ।
'মানব' শব্দটা অবশ্যই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কে বোঝায়।
'অধিকার' হল,কিছু স্বার্থ কে যখন আইনগত বা নৈতিক নিয়ম নীতি দ্বারা সংরক্ষিত করা হয়।
"মানবাধিকার" হল, বস্তুত মানব পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং অলংঘনীয় অধিকার হলো মানবাধিকার ।
অন্য ভাবে বলতে গেলে, মানবাধিকার হল মানুষের সেই সব অপরিহার্য চাহিদা, যেগুলো মানুষের সার্বিক উন্নয়ন তথা বুদ্ধি বৃত্তিকতা,সৃজনশীলতা,মর্যাদা ও ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সমাজে বাসযোগ্য করে তোলে । এবং যেগুলো ছাড়া জীবন পরিচালনা প্রায় অসম্ভব ।
বাংলাদেশে দীর্ঘ দিনের বহু ত্যাগ আর শত সংগ্রামের পটভূমির মধ্যে দিয়ে অবশেষে স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে লাখ প্রাণের বিনিময়ে আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে দেশটি স্বাধীন হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
কিন্তু অতীব দু:খের বিষয় তথা দূর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পার হতে চলছে, এখনো এই দেশটিতে মানবাধিকার বাণী নিরবে নিভৃতে কাদঁছে । যে অধিকার আদায়ের জন্য মুক্তিযুদ্ব হয়েছিল,সে অধিকারের আজো দেখা মিলেনি । বাংলাদেশের মানুষকে মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে এখনো । প্রতি নিয়তই ঘটছে মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন । বাংলাদেশে আজ যেন মানবাধিকার লংঘনের চারনভূমিতে পরিণত হয়েছে।
যদিও সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে ।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগে অনুচ্ছেদ ২৬ থেকে ৪৭(ক) পর্যন্ত মৌলিক মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে এবং অধিকারের প্রকৃতি ও ভোগের নিশ্চয়তা সম্পর্কে বর্ননা করা হয়েছে । শুধু তাই নয়, অনুচ্ছেদ ২৬ এ বলা হয়েছে, মৌলিক অধিকারের সহিত অসামাঞ্জস্যপূর্ণ সকল আইন বাতিল করতে ।
মৌলিক অধিকার গুলো দেশের সর্বোচ্চ আইন । এছাড়াও জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক কনভেনশন এবং প্রচলিত আইনে বিভিন্নভাবে এই " মানবাধিকার " এর কথা বলা হলেও বাস্তবে তার দেখা মিলছে না ! এবং অদ্যাবধি সেসবের কিছুই প্রকৃতার্থে বাস্তবায়িত হয়নি। ঐ সমস্ত নীতিগুলোর বাস্তব প্রয়োগ কতটুকু দেখা যাচ্ছে তা নিম্নের ঘটনায় বোঝাই !
দুর্নীতি,হত্যা,গুপ্তহত্যা ,অপহরণ,গুম,খুন,সড়ক দুর্ঘটনা, ছিনতাই,ডাকাতি,শ্যোন অ্যারেস্ট,রিমান্ড,পুলিশ ও র্যবের বন্দিশালায় পাশবিক নির্যাতন ও নানাভাবে হয়রানি,ক্রসফায়ার, বিচারবহির্ভূত হত্যা,আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে অপহরণের পর নিখোঁজ,গুলীবিদ্ধ লাশ উদ্ধার, মামলা দিয়ে হয়রানি,নারী নির্যাতন, ইভটিজিং, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের দলন পীড়ন,হামলা – মামলা, রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানি ,প্রতিপক্ষকে ঘায়েল,পাশাপাশি চলছে বছরজুড়ে ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। বিচারালয়ে পাচ্ছে না ন্যায় বিচার, পক্ষপাত দুস্ট রায়ের অভিযোগ,মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতা। ককটেল – বোমার বিস্ফোরণ, আতংকিত জীবন যাপন,এক কথায়, সারাদেশ যেন এক মৃত্যুপুরী !
প্রভৃতি হাজারো "মানবাধিকার" লংঘন আমাদের দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয় ,যাদের হাতে মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব,তাদের হাতেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশী । সব মিলিয়ে বলতে গেলে, "মানবাধিকার" লংঘনের এক চরম স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ !
লেখক : এম.আর.ওয়াজেদ চৌধুরী (রায়হান)
ছাত্র, আইন বিভাগ । আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয় চট্রগ্রাম (IIUC)