যাহোক পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পাপ হল হত্যা। হাবীল ও কাবীলের ঘটনা এক্ষেত্রে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। সেই সভ্যতার আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত এই হত্যা তথা খুনের ঘটনা চলমান ।
মানুষ ইচ্ছায়, অনিইচ্ছায় ,ভুলবশত, প্ররোচিত বা প্রভাবিত ,কারণবশত হয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটায় । কেন ঘটায় সেটা নিয়ে নানান ব্যখা- বিশ্লেষণ থাকলেও,এক কথায় আমরা বলতে পারি যে ,
যেকোনো উপায়ে মানুষের প্রাণনাশ তথা চিরতরে দুনিয়া থেকে বিদায় করার নামই হল একথায় হত্যা বা খুন ।
আমাদের দেশে প্রচলিত দন্ডবিধি ৩০০ ধারায় খুন সম্পর্কে চারটি বিষয় বলা হয়েছে,
এক,
সেই সকল ক্ষেত্রসমূহ ছাড়া শাস্তিযোগ্য নরহত্যা খুন বলে গণ্য হবে, যদি যে কার্যের ফলে মৃত্যু সংঘটিত হয় সে কার্যটি মৃত্যু সংঘটনের অভিপ্রায়ে সম্পাদিত হয়;
দুই ,
যদি কাজটি এইরূপ দৈহিক জখম করার উদ্দেশ্যে সম্পাদিত হয়, যা যে ব্যক্তির ক্ষতি সাধন করা হয় তার মৃত্যু ঘটাতে পারে বলে অপারাধকারীর জানা থাকে;
তিন,
যদি কোন ব্যক্তিকে দৈহিক জখম করার অভিপ্রায়ে কাজটি সম্পাদিত হয় এবং অভিষ্ট দৈহিক জখমটি প্রাকৃতিক স্বাভাবিক অবস্থায় অনুরূপ মৃত্যু ঘটাবার জন্য যথেষ্ট হয়;
চার,
যদি উক্ত কার্য সম্পাদকারী ব্যক্তি অবগত থাকে যে, কাজটি এত আসন্ন বিপজ্জনক যে, খুব সম্ভবত মৃত্যু ঘটাবে অথবা এরূপ দৈহিক জখম ঘটাতে পারে এবং মৃত্যু সংগঠনের বা পূর্বোক্ত জখম ঘটাবার ঝুকি লওয়ার অজুহাত ছাড়াই অনুরূপ কার্য সম্পাদন করে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,
(ক), মি: করিম হত্যার উদ্দেশ্যে মি:রহিমকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করল। যার ফলে মি: রহিম তাৎক্ষনিক মারা যায়।
(খ),মি: করিম গুলি ভর্তি পিস্তল নিয়ে জনতার উদ্দেশ্য গুলি ছুড়ল। যার ফলে মি: রহিম মারা যায় । মি: করিম হত্যার দায়ে অভিযুক্ত যদিও তার ইচ্ছা ছিলনা মি: রহিম কে হত্যা করা।
তবে দণ্ডবিধি ৩০০ ধারার কিছু ব্যাতিক্রম রয়েছে ;
বলা হয়েছে যে,শাস্তিযোগ্য নরহত্যা খুন বলে গণ্য হবেনা,
√√ যদি মারাত্তক ও আকস্মিক প্ররোচনার ফলে অপরাধী আত্ন সংযমশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং যে লোক প্ররোচনা দান করেছে সেই লোকের অথবা ভুল বা দুর্ঘটনাক্রমে অন্য কোন লোকের মৃত্যু ঘটায় তাহলে শাস্তিযোগ্য নরহত্যা খুন বলে গণ্য হবেনা।
√√ যদি অপরাধী সরল মনে তার আত্নরক্ষার বা সম্পত্তি রক্ষার ব্যাক্তিগত অধিকার প্রয়োগকরে কোনরূপ পুর্ব-পরিকল্পনা ছাড়া কারো মৃত্যু ঘটায়।
√√ যদি দোষী একজন সরকারী কর্মচারি বা সরকারী কর্মচারির সহায়তা কারী হিসাবে আইন অনুযায়ী তার কার্য সম্পাদন করতে গিয়ে কোনরূপ অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া প্রয়োজনীয় ও আইন সম্মত বলে সরল মনে বিশ্বাস করে কোন লোকের মৃত্যু ঘটায়।
√√ যদি অপরাধটি কোন আকস্মিক বিবাদের সময় আকস্মিক উত্তেজনার কারনে কোনরূপ পুর্ব-পরিকল্পনা ছাড়া ঘটে এবং অপরাধী কোন প্রকারের অন্যায় সুযোগ গ্রহণ না করে।
√√যদি যে লোকের মৃত্যু হয়,সেই লোক ১৮ বছরের বেশি বয়স্ক হয় এবং স্বেচ্ছায় স্বীয় সম্মতিক্রমে মৃত্যুবরন করে বা মৃত্যুর ঝুকি গ্রহণ করে।
নরহত্যার দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে;
এক,
যদি কোন ব্যক্তি কাউকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে হত্যা করে ;
দুই,
যদি কোন ব্যক্তি এমনভাবে শারীরিক ক্ষতি করে ,যার ফলে সেই আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি মারা যায় ;
তিন,
যদি কোন ব্যক্তির জানা থাকে যে, তার উক্ত আঘাতের ফলে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যু অবধারিত;
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,
(ক),মি: রহিম মি: করিমকে হত্যার উদ্দেশ্য খাবারে বিষ মিশিয়ে রাখলেন যাতে মি:করিম সে খাবর খেয়ে মারা যায়। মি: করিম সেই খাবার খেলেন এবং মারা গেলেন ।অতএব, মি: রহিম নরহত্যার শাস্তিযোগ্য অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হলেন।
(খ), বিশ্বজীৎ হত্যা কান্ড । বিশ্বজীৎ এর শরীরে অভিযুক্তরা চাপাতি দিয়ে কোপায় । যার ফলে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে সে মারা যায় ।
(গ), মি: করিম জানে যে, মি: রহিম ঝোপের আড়ালে আছে যা আবুল জানে না। তা সত্ত্বেও সে আবুল কে প্ররোচিত করল যেন ঝোপের ঐ নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে গুলি করে যাতে করে মি: রহিম এর মৃত্যু ঘটে। আবুল
গুলি ছুড়ল এবং মি: রহিম মারা গেল। এক্ষেত্রে আবুল কোন অপরাধের দায়ে দোষী হবে না। কিন্তু মি: করিম নরহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে।
এক,
যে ব্যক্তি খুন করবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড;
দুই,
যে ব্যক্তি খুন করবে তার শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড;
এর সাথে আরও বলা হয়েছে যে, ঐ দুটি শাস্তির সাথে জরিমানা ও হতে পারে।
আবার দন্ডবিধি ৩০৩ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হওয়ার পরে আবারো হত্যা বা খুন করে সে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত হবে।
এক,
যে ব্যক্তি এমন নরহত্যা করল যা খুনের পর্যায়ে পড়ে না, সে যাবজ্জীবন কারা দন্ডে দন্ডিত হবে অথবা দশ বছর পর্যন্ত সাজা ভোগ করবে এবং সাথে জরিমানা হবে।
দুই,
যে ব্যক্তি দ্বারা মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে সে কাজের উদ্দেশ্য যদি মৃত্যু হয় অথবা এমন শারীরিক আঘাত যার ফলে মৃত্যু হয়, তাহলে সে যাবজ্জীবন কারা দন্ডে দন্ডিত হবে অথবা দশ বছর পর্যন্ত সাজা ভোগ করবে এবং সাথে জরিমানা হবে।
তিন,
যদি জেনে শুনে এমন কাজ করে যা দ্বারা মৃত্যু সংঘটিত হয় কিন্তু এরূপ ইচ্ছা ছিল না অথবা এমন শারীরিক ক্ষতি যার ফলে মৃত্যু সংঘটিত হয় তাহলে তিনি দশ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই প্রযোজ্য হবে।
আরও বলা হয়েছে দন্ডবিধির ৩০৪ক ধারায় ,রাস্তায় বা জনপথে ট্রাফিক না মেনে অথবা বেপরোয়া বা অবহেলা গাড়ি চালিয়ে বা কোন যানে আরোহণ করে মৃত্যু ঘটায় সেটাও দন্ডনীয় নরহত্যার বলে গণ্য হবে ।এবং সে শাস্তি স্বরূপ সে পাঁচ বছর পর্যন্ত
কারাদন্ডে দন্ডিত হবে অথবা জরিমানাসহ উভয়ই হবে তার শাস্তি।
আর যা দন্ডনীয় নর হত্যার পর্যায়ে পড়ে না তার জন্য সে তিন বছর পর্যন্ত যেকোন প্রকারের (সশ্রম বা বিনাশ্রম) কারাদন্ডে দন্ডিত হবে অথবা জরিমানা অথবা জেল- জরিমানা উভয়ই হবে। (ধারা-৩০৪ খ)
অন্যদিকে রাষ্ট্রপতিকে আমাদের সংবিধানের ৪৯ নং অনুচ্ছেদে মতে ‘কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোন দন্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যেকোন দন্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’
এটি করার উদ্দেশ্য হল, কোন নিরঅপরাধ ব্যক্তিকে রেহাই দেওয়ার জন্য । যে হয়তোবা আইনের চোখে অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে কিন্তু প্রক্ ত পক্ষে সে তেমনটি নয় । কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ তার উল্টো । উক্ত অনুচ্ছেদের অপব্যবহার প্রতিটি সরকারের
আমলে আমরা দেখি । অনেক আত্নস্বীক্ ত দাগী আসামীও দাপটের কারণে মুক্তি পেয়ে যায় ।
মোটামুটি এই হল হত্যা বা খুন সম্পর্কে আইনের বিধান যা আমাদের দেশে প্রচলিত । এছাড়াও ঘটনার বিশ্লেষণে এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে অন্যান্য প্রচলিত বিদ্যমান আইনের ও প্রয়োগ করা যেতে পারে ।
সুতরাং আমাদের সকলের উচিৎ সকল প্রকার হত্যা বা খুন সম্পর্কিত কার্যকলাপ থেকে নিজেদের এবং অন্যদের বিরত রাখা । সর্বোপরি দেশের আইন আদালতের সম্মান প্রদর্শন রেখে যেকোন ব্যবস্থা তথা আইন গত সিদ্ধান্ত নেওয়া ।


























0088-01755991488, 01675623096


