হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রীয় বিয়ের দালিলিক প্রমাণ সুরক্ষার জন্য হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এতে বিবাহ নিবন্ধনের বিষয়টি ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে।
হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের আবেদন ও পদ্ধতি:
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শাস্ত্রীয়ভাবে বিয়ের পর, বিয়ে যে স্থানে হবে, সেই এলাকার নিবন্ধকের কাছে নিবন্ধন করতে হবে। বর-কনে যৌথ স্বাক্ষর বা টিপসই দিয়ে নিবন্ধনের জন্য লিখিত আবেদন করবে। আবেদনের সঙ্গে বর-কনের পাসপোর্ট আকারের বা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ছবি সংযুক্ত করতে হবে। তবে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের জন্য হিন্দু পুরুষের বয়স ২১ বছর এবং হিন্দু মেয়ের বয়স ১৮ বছর হতে হবে। অন্য কোন আইনে যাই থাকুক না কেন, ২১ বছরের কম বয়সী কোনো হিন্দু পুরুষ বা ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো হিন্দু মেয়ে বিয়ে করলে তা নিবন্ধনযোগ্য হবে না। অতএব, আবেদনের সময় বয়স প্রমান করে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র সাথে রাখতে হবে।
নিবন্ধক কোনো আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে আবেদনকারী প্রত্যাখ্যানের ৩০ দিনের মধ্যে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে আপিল করতে পারবেন। আপিল সম্পর্কে জেলা রেজিস্ট্রারের আদেশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন ফি: বিধিমালা অনুযায়ী প্রতি বিয়েতে নিবন্ধন ফি লাগবে এক হাজার টাকা। এই ফি পরিশোধ করবে বরপক্ষ। বিয়ে-সংক্রান্ত নথির হুবহু নকল পাওয়ার জন্য ১০০ টাকা ফি দিতে হবে।
বিবাহ নিবন্ধক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্তির আবেদন ও পদ্ধতি:
নিবন্ধনের জন্য প্রতি সিটি করপোরেশনে অনধিক তিনজন এবং প্রতি উপজেলায় একজন করে নিবন্ধক নিয়োগ করা হবে। বিবাহ নিবন্ধক হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্তির যোগ্যতা, অধিক্ষেত্র, নিবন্ধনের জন্য আদায়যোগ্য ফি ও অন্যান্য বিষয়গুলোও আইন অনুযায়ী নির্ধারণের বিধান রাখা হয়েছে।
নিবন্ধক হিসেবে আবেদনের জন্য প্রার্থীকে কমপক্ষে এইচএসসি পাস হতে হবে। বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২৫ এবং অনূর্ধ্ব ৫০ বছর। প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা এবং হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বী হতে হবে। বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হলে নিবন্ধকের মেয়াদ শেষ হবে। বিধি মালায় বলা হয়, হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার প্রার্থীকে তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলারের প্রদত্ত নাগরিকত্বের সনদ আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
প্রত্যেক নিবন্ধককে তাঁর এলাকার কোনো উপযুক্ত স্থানে কার্যালয় স্থাপন করতে হবে। যে এলাকার জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে, সেই এলাকার কোনো বেসরকারি স্কুল বা কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও কোনো নিবন্ধক সবেতনে চাকরি করতে পারবেন না। নিবন্ধককে বিবাহ রেজিস্টার ও ফি বই সংরক্ষণ করতে হবে যা নির্ধারিত ফি দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যাবে।
প্রত্যেক নিবন্ধক প্রতিবছরের ৩১ মার্চের মধ্যে সরকারকে নির্দিষ্ট হারে ফি দেবেন। সিটি কর্পোরেশন এলাকার নিবন্ধককে সরকারি কোষাগারে বার্ষিক দুই হাজার টাকা এবং উপজেলা এলাকার নিবন্ধককে বার্ষিক এক হাজার টাকা জমা দিতে হবে।
নিবন্ধকেরা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আগের বছর নিবন্ধিত সব বিয়ের তালিকাসহ একটি প্রতিবেদন জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেবেন। জেলা রেজিস্ট্রার ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলার সব বিয়ের তালিকা মহাপরিদর্শকের (নিবন্ধন) কাছে জমা দেবেন। মহাপরিদর্শক একটি বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিবছর ৩১ মার্চের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন।
কোন এলাকায় হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার পদ শূন্য হলে সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ওই পদের জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত আবেদনপত্র জেলা রেজিস্ট্রার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবেন। যাচাই বাছাই শেষে আইন মন্ত্রণালয় উপযুক্ত প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট এলাকা হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ দেবে। রেজিস্ট্রার নিয়োগের ক্ষেত্রে কাব্যতীর্থ বা ব্যাকরণতীর্থদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
May 29, 2013 at 11:04 am
আইনটি ঠিকই মনপুত হয়েছে। কিন্তু বিবাহ রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক এবং সংশ্লীষ্ট উপজেলা বা সিটিকর্পোরেশনের প্রধান মন্দিরের যোগ্যতা সম্পন্ন পুরোহিত বা নিকটবর্তী যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে আগ্রাধিকার দিলে ভালহতো।